Search This Blog

ঘরে বসে কাজ: কতটা বাস্তব আর কতটা কষ্টকল্পনা?

Tuesday, August 16, 2011

ঘরে বসে কাজ: কতটা বাস্তব আর কতটা কষ্টকল্পনা?


ঘরে বসে কাজ: কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব?
ঘরে বসে কাজ: কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির সুবাদে ঘরে বসেই কাজ করা এবং প্রচুর পরিমাণে টাকা আয় করা সম্ভব, এরকম একটা ধারনা সাধারণভাবে প্রচলিত আছে। এমনকি পাশের দেশ ভারতেও ঘরে বসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা প্রচুর মানুষ আছেন বলেও আমরা শুনি। বিশ্বায়নের ফলে কে কোথায় বসে কাজ করছে সেটা আর গুরুত্বপূর্ণ নেই এখন, দিন শেষে কাজটা আদায় হল কি না সেটিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ‘ফলো দ্য সান’ বিজনেস মডেলে সূর্য কখনো ডোবে না। এক জায়গায় এখন গভীর রাত হলেও অন্য জায়গায় মধ্যদুপুর।


আর এই মডেল বলে, পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে সবসময়ই কাজের নেশায় মেতে আছে অসংখ্য মানুষ। কাজের এ দুনিয়ায় কখনোই সূর্য অস্ত যায় না। একই সঙ্গে আগের তুলনায় মানুষ কিন্তু এখন অনেকটাই বহির্মুখী। ভ্রমণের পরিমাণ কেবলই বাড়ছে। আজকের ব্যস্ত এক্সিকিউটভদের এখন গাড়ি, বিমান, হোটেল, এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ কিংবা ট্যক্সির ভেতর কাটানো সময়ও তাই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। কর্মীরা এখন আর অফিসের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী নন, তাঁরা এখন সীমানাবিহীন চলমানতায় অভ্যস্ত। এর পিছেনে মুল কারন হতে পারে, যে সকল সমস্যা তাকে অফিসে আটকে থাকতে বাধ্য করতো, সেই সব নিত্য কাজ এখন একজন এক্সিকিউটিভ সম্পন্য করতে পারেন চলতে ফিরতেই, উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তির অবাধ সহযোগিতায়।


চলতে ফিরতে কাজ: নয়া যুগের নয়া ট্রেন্ড।
চলতে ফিরতে কাজ: নয়া যুগের নয়া ট্রেন্ড।

ওয়ার্কফোর্স মোবিলিটি বনাম মোবাইলওয়ার্কফোর্স

বাড়িতে বসে মনের সুখে কাজ করার কথা এখন প্রায়ই শোনা যায়, কিন্তু সব ধরনের কাজ যে এভাবে করা যায় না সেটাও বুঝতে হবে। সন্দেহ নেই, ট্রাফিক জ্যামের দৌরাত্ম্যে পিষ্ট এই নগর জীবনে ঘরে বসেই অফিস করা এবং মাস শেষে পে-চেক পেয়ে যাওয়ার স্বপ্ন মানুষকে চনমনে করে তোলে। কিন্তু, ঐ যে বললাম, এখানে বড় একটা কিন্তু আছে। প্রথমত, আপনার কাজের প্রকৃতি এবং দলের অবস্থা বা team situation-এরই ওপর নির্ভর করবে বাড়িতে বসে কাজ করা আপনার কপালে আছে কি না। যেমনটা দেখা গেছে, কাজটা যদি হয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা, ফ্রিল্যান্স লেখালেখির অ্যাসাইনমেন্ট বা গবেষণার কাজ,  এমনকি সংগীত বা সূর রচনার, তাহলে বাড়িতে বসে কাজ করা অনেকটাই সম্ভব। আর আইটি/সফটঅয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে, যেখানে আলোচনা, টেলিফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে কাজ বরাদ্দ (task allocations), ইন্টারনেট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন  ব্যবহার, কোম্পনি ইন্ট্রানেট ব্যবহার বা রিপোর্ট ফাইলিংই গুরুত্বপূর্ণ সেখানেও এটা করা সম্ভব। আবার কিছু কিছু পরামর্শ সেবা বা কনসাল্টিং কাজেও বাড়িতে বসে কাজ করা সম্ভব।
কিন্তু যেখানে প্রচুর পরিমাণে ক্লায়েন্ট সামলানো বা নিয়মিত ভাবে মানুষের সাথে ইন্টার‌্যাকটিভ কাজ আছে (বিপণন, শিক্ষকতা, ডাক্তারি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সেবা), যেখানে ফ্যাক্টরির পরিবেশে উৎপাদনমুখী কাজ করতে হয় সেখানে বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ কম।

তবে দলগত ভিত্তিতে কাজ করার প্রশ্ন উঠলে আপনি, আপনার দলের অন্যান্য সদস্য এবং আপনার দলের তত্ত্বাবধায়ক বা ব্যবস্থাপক অন্য কোনো শহরে বা অন্য কোনো দেশে আছেন কি না সেটি খুব বড় ব্যাপার নয়। বর্তমানে ওয়েব ক্যামেরা, নেট মিটিং অ্যাপ্লিকেশন, ভিডিও কনফারেন্সিং ফ্যাসিলিটি, চ্যাট রুম এবং ডকুমেন্ট হোস্টিং ওয়েব সাইটের ব্যাপক প্রচলনের কারণে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের আরেকজন মানুষের সঙ্গে এক টিমের সদস্য হয়ে কাজ করায় কোনো সমস্যা নেই। যেমন, এখনকার সময়ে অনেক কাজ পাওয়া যায় ওয়েব ভিত্তিক এসব কাজের মুল কথা হল কাজ কর, টাকা নাও। কাজ ঠিক মত বুঝিয়ে দিতে পারলে পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে। এই ধরনের কাজগুলো অনায়াসেই করা সম্ভব বাড়িতে বসে। তবে এধরনের কাজই তো সব নয়। এর বাইরেও অনেক মুল ধারার কাজ আছে যেগুলোর প্রয়োজন সম্ভবত কখনই ফুরাবে না।

মোবাইল কর্মীর ধরন


চার দেয়ালের ঘেরাটোপে বন্দী নন, চলমান বা জঙ্গম (mobile) এমন কর্মীদের বিভিন্ন ধরন হতে পারে:


ক) টিদারড/রিমোট ওয়ার্কার (Tethered/Remote Worker):
একজন কর্মী, যিনি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট স্থানে থেকেই কাজ করেন, তবে সে স্থানটি কোম্পানির কেন্দ্রীয় দপ্তর (central company systems) থেকে দূরে। এর মধ্যে পড়ে হোম ওয়ার্কার, টেল কটেজ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাখা কর্মীরাও।


খ) রোমিং ইউজার (Roaming User):
একজন কর্মী যিনি অয়্যারহাউজ, শপ ফ্লোর ধরনের পরিবেশে বা একসঙ্গে একাধিক স্থানে (সম্মেলন কক্ষ) কাজ করেন।


গ) নোমাড (Nomad):
এ শ্রেণীতে পড়েন সেসব কর্মী যারা হোটেল রুম বা semi-tethered পরিবেশে কাজ করেন এবং তাদের ঐসব স্থানের উপযোগী বিভিন্ন প্রযুক্তির দরকার হয়।


ভীষণ ব্যাস্ত এক রোডওয়ায়ির: যত বেশি কাজ তত বেশি মুনাফায় বিশ্বাসী এই দলের মানুষরা।

ভীষণ ব্যাস্ত এক রোডওয়ায়ির: 
যত বেশি কাজ তত বেশি মুনাফায় বিশ্বাসী এই দলের মানুষরা।

ঘ) রোড ওয়ারিয়র (Road Warrior):


এরা হচ্ছে মোবাইল ওয়ার্কারের চূড়ান্ত রূপ। এরা অফিসে খুব কম সময়ই কাটান, তার বদলে রাস্তায়, হোটেলে ইত্যাদি জায়গায় চলমান অবস্থায় কাজ করেন। এদের মধ্যে পড়েন বিপণন এবং মাঠকর্মীরা।


বাড়িতে বসে কাজ করার সমস্যা ও সম্ভাবনা


আসলে বাড়িতে বসে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিই একমাত্র বিবেচনা নয়। এখানে অন্যান্য কিছু ফ্যাক্টরও আছে। এর মধ্যে এক নম্বর হল কাজের উৎপাদনশীলতা। কর্মী যখন অফিসের বাইরে, তত্ত্বাবধায়ক বা ব্যবস্থাপকের নজরদারির বাইরে থাকেন তখন তার কাজের পরিমাণ কিভাবে নির্ধারণ করা হবে সেটা একটা সমস্যা বটে। আবার কর্মীকে যদি বাড়িতে বসেই কাজ করার সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে তার বাড়িতে কাম্য মাত্রায় প্রযুক্তিগত সুবিধা আছে কি না সেটিও একটা প্রশ্ন। আবার অফিসের এত কর্মীর মাঝে কাকে বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে আর কাকে হবে না সেটা ঠিক করাও একটা ঝামেলা।


বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যের একটি বড় অংশ এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রায় পুরোটাই ডিজিটাল আকারে আছে এবং সেটি থাকে কর্পোরেট সার্ভারে। বাড়িতে বসে কাজ করা কর্মী প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যের গোপনীয়তা এবং সুরক্ষার ব্যাপারটি কতটুকু নিশ্চিত করতে পারবেন?

কোম্পানিগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক উপাত্তের নিরাপত্তা বিধানের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কর্মীর অবিশ্বস্ততা বা অসতর্কতার কারণে প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতি না হয়। অফিসের বাইরে কাজ করা কর্মীর ওপর ঠিকমত নজরদারি করতে না পারার জ্বালাটাও অনেক ম্যানেজারকে জ্বালিয়ে মারবে। এ কারণে মোবাইল কর্মীদের ব্যাপারে সুষ্ঠু, সুচিন্তিত এবং সময়োপযোগী পরিকল্পনা ছাড়া এ ধরনের একটি ব্যবস্থাকে কার্যে রূপ দেয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

তবে যত যাই বলা হোক না কেন, আমাদের কর্ম পরিবেশ কিন্তু আস্তে আস্তে এইদিকেই যেতে শুরু করেছে। তবে এটা পুরোপুরি ভাবে এই নতুন সংস্কৃতি চালু হতে বেশ অনেকটা সময় লাগবে, তাতে সন্দেহ নেই। এর সুবিধা নিতে হলে একই সাথে পরিবর্তন করতে হবে কর্মজীবিদের কাজের ধারা, তাদের কাজের মুল্যায়ন পদ্ধতি এবং সচ্ছতা। এটা এত সহজে আসার জিনিস নয়। তবে এই কর্ম পদ্ধতির কিছু সুবিধা আছে যেটা মালিক পক্ষ ও কর্মচারী পক্ষ দু দলকেই আকৃষ্ট করে চলেছে। তাই এখন কেবল দেখার অপেক্ষা, এই নতুন ট্রেন্ড কোন দিকে যায়।

0 comments:

Post a Comment