Search This Blog

কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার জগতে এক নতুন জাদুকরী সম্ভাবনা মেমরিস্টর !!!

Tuesday, August 16, 2011

মেমরিস্টর: কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার জগতে এক নতুন জাদুকরী সম্ভাবনা।


সব কিছুরই একটি সীমা আছে। এমনকি প্রায় প্রতি দুমাসে আকারে বেড়ে যাওয়া মেমোরী কিংবা নতুন বেশি ক্ষমতার প্রসেসরও এর ব্যতিক্রম নয়।

ইন্টেল এর সহ স্থাপক গরডন মুর ১৯৬৫ সালে একটি প্রযুক্তি বিষয়ক ভবিষ্যৎবানী করেন। তিনি যা বলেন তা হল অনেকটা এরকম, একটি নির্দিষ্ট পরিমান স্থানে যে পরিমান ইলেকট্রনিক উপাদান কার্যকর ভাবে বসান সম্ভব তার পরিমান দ্বিগুন হবে প্রতি দুবছরে। তিনি ইলেকট্রনিক উপাদান হিসেবে ধরেছেন ট্রানজিস্টার ও আর কিছু মৌলিক উপাদান। তার এ ভবিষ্যৎবানীকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় মুর’স ল। গত প্রায় ৪৫ বছর ধরে তার এই ল সঠিক ভাবে কাজ করে এসেছে। এরই ফলাফলে আমরা দেখি কিছুদিন পরপর নতুন দ্বিগুন ক্ষমতার প্রসেসর, র‌্যাম দিয়ে বাজার ভরে যায়। শুধু প্রসেসর বা র‌্যামই নয়, ডিজিটাল ক্যামেরার ইমেজ সেন্সর সহ বাজারের যত প্রডাক্ট আছে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সবাই এর দ্বারা প্রভাবিত। তবে প্রতি দুই বছর পরপর দ্বিগুন ক্ষমতার পন্য বাজারে আসারও একটি সীমা আছে। বর্তমান প্রযুক্তিগত অবস্থায় মুর’স ল বলবৎ থাকবে আর পাচ থেকে দশ বছর। কারন একটি নির্দিষ্ট জায়গাতে কত ছোট ভাবে কতগুলো উপাদান কার্যকর ভাবে বসান সম্ভব তার একটি সীমা আছে। মৌলিক ইলেকট্রনিক উপাদানগুলো ছোট হতে হতে এখন ন্যানোমিটার পর্যায়ে চলে গেছে। আর বেশি ছোট করা যাবে না। এখন নতুন কোন প্রযুক্তি আবিস্কার না হলে প্রতি দুবছর পরপর নতুন দ্বিগুন ক্ষমতার পন্য বাজারে আসবার স্রোত যাবে প্রায় বন্ধ হয়ে।

মেমরিস্টর কি সেই নতুন প্রযুক্তি? প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন। এটি সম্পুর্ন মৌলিক একটি প্রযুক্তি যেটা আগে কখনও ব্যবহার করা হয়নি। যদিও ১৯৭১ সালেই ত্বাত্বিক ভাবে এর অস্তিত্ব প্রমানিত হয়েছে কিন্তু কাজ করবার মত কিছু একটা করে দেখাতে পেরেছে এই মাত্র কিছুদিন হল এইচ-পি এর বিজ্ঞানীরা। ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের গবেষক লিয়ন চুয়া ১৯৭১ সালে এর কথা তার গবেষনার মাধ্যমে জানান। আমরা বর্তমানে যত ইলেকট্রনিক পন্য ব্যবহার করি সেগুলো তৈরি হয় তিনটি মৌলিক উপাদান দিয়ে। রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ও ইনডাক্টর। রেজিস্টার চার্জ এর পথে বাধা সৃষ্টি করে, ক্যাপাসিটর চার্জ ধারন করে ও ছেড়ে দেয় আর ইনডাক্টর চার্জ থেকে বৈদ্যুতিক আবেশ তৈরি করে।

কেন মেমরিস্টারকে মৌলিক উপাদান বলা হচ্ছে? কারন, মেমরিস্টার এমন কিছু করতে সক্ষম যা এই তিনটি উপাদানকে এক সাথে ব্যবহার করেও করানো সম্ভব নয়। মেমরিস্টারকে এমন একটি পাইপের সাথে তুলনা করা হচ্ছে যেটি পানির প্রবাহের দিক ও পরিমান সম্পর্কে সচেতন। একটি দিক থেকে পানি এলে সে তার জন্য পরিমান মত আয়তনে বেড়ে যাবে। আবার অন্য দিক থেকে এলে সেটি নিজের আয়তন সঙ্কুচিত করে ফেলবে পানির চাপের উপর ভিত্তি করে। শুধু তাই নয়, এর সবথেকে বড় বৈশিষ্ঠ হল, পানি প্রবাহ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেলে এটি তার ঠিক সেই আয়তনেই স্থির হয়ে থাকবে। বাস্তব উদাহরন হল, মেমরিস্টার দিয়ে বানানো র‌্যাম যুক্ত কম্পিউটার হঠাৎ করে বিদ্যুৎ জনিত কারনে বন্ধ হয়ে গেলে চালু করার পর ঠিক আগের অবস্থাতেই তাকে পাওয়া যাবে। তার কোন তথ্যই হারাবে না। ব্যপারটা যেন টেলিভিশন চালু করে সাথে সাথে দেখতে শুরু করার মত। বর্তমান র‌্যাম হলে সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। পুরো পিসি চালু করতে হবে, সব রকম ড্রাইভার লেঅড দিতে হবে। কিন্তু মেমরিস্টর এর ক্ষেত্রে তা হয় না।

এটাই সব নয়। মুর’স ল এর সীমাবদ্ধতার কারনে আগামী কয়েক বছর পরেই ইলেকট্রনিক উপাদান সঙ্কুচিত করে ইলেকট্রনিক সার্কিট যেমন প্রসেসর বা র‌্যাম অথবা অন্যান্য উপাদান বানাবার শেষ সীমায় চলে আসবে। তার মানে কি আমরা নতুন আর বেশি ক্ষমতার সার্কিট পাবো না? না, পাওয়া যাবে।। শুধু বেশি ক্ষমতারই নয়, অনেক অনেক বেশি ক্ষমতার ইলেকট্রনিক সার্কিট পাবার উপায় করে দিয়েছে এই নতুন উপাদান মেমরিস্টর।

বর্তমান প্রসেসর, র‌্যাম, হার্ড ড্রাইভ আর ফ্ল্যাশ মেমোরী; সব অনেক অনেক পুরনো আর প্রাচীন যুগের জিনিস হয়ে যাবে এই নতুন প্রযুক্তির আগমনে। বর্তমান র‌্যামকে তো এরই মধ্যে অপ্রয়োজনীয় চিন্তা করতে শুরু করেছেন মেমরিস্টর গবেষকরা। মেমরিস্টর দিয়ে বানানো র‌্যাম হবে অনেক অনেক বেশি গতি ও অনেক বড় আকার সম্পন্য। এখনকার সর্বোচ্চ র‌্যাম সাপোর্টকারী সিস্টেম ১২৮ গিগাবাইট র‌্যাম সাপোর্ট করতে পারে, তাও বেশ অনেকগুলো র‌্যাম মিলিয়ে। কিন্তু মেমরিস্টর এর একটি র‌্যাম একাই হতে পারে কয়েক টেরাবাইট বা তার চেয়েও বেশি আকারের। এর আরও একটি বৈশিষ্টের কথা আগেই বলা হয়েছে, যেটা বদলে দিতে পারে সেকেন্ডারী মেমোরী বা হার্ড ড্রাইভ এর প্রয়োজনীয়তা। মেমরিস্টর এর বৈশিষ্ট আগেই বলা হয়েছে, এটি বিদ্যুৎ চলে গেলেও তার মধ্যে থাকা তথ্য মুছে যায়না। তার মানে দাড়াল, সত্যিই যদি মেমরিস্টর র‌্যাম বিশাল ধারন ক্ষমতার হয়, অত্যন্ত দ্রুত গতির হয়, বিদ্যুৎ গেলেও তথ্য হারিয়ে না ফেলে, তবে তুলনামুলক অনেক ধীর গতির হার্ড ড্রাইভের আর কোন প্রয়োজনীয়তাই থাকল না। সময়ের সাথে সাথে হার্ড ড্রাইভের ধারন ক্ষমতা বাড়লেও তথ্য আদান প্রদান গতি সেই তুলনায় বাড়েনি তেমন ভাবে। এই কম গতি একটি কম্পিউটার সিস্টেম এর সার্বিক পারফনমেন্স এ নেগেটিভ প্রভাব রাখে। সেই তুলনায় মেমরিস্টর হতে পারে এক অসাধারণ বিকল্প। কতটা তথ্য ধারণ করতে পারে মেমরিস্টর চিপ? একটি মেমরিস্টর মেমোরী চিপ প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ধারন করতে পারে কয়েক পেটাবাইট তথ্য (১০০০ মেগা= ১ গিগা, ১০০০ গিগা=১ টেরা, ১০০০ টেরা= ১ পেটা, ১০০০ পেটা= ১ এক্সা, ১০০০ এক্সা= ১ জিটা, ১০০০ জিটা= ১ ইয়োটাবাইট)।
 সত্যিই বিশাল পরিমান জায়গা। সব মিলিয়ে এর দ্বারা তৈরি মেমোরী সিস্টেম কত বিশাল হবে তা এখনও ধারনা করা যাচ্ছে না। এ যে শুধু মাত্র বিশাল পরিমান স্পেস দিচ্ছে তাই নয়, এই সিস্টেম অত্যস্ত কম এনার্জী ব্যয় করে। বর্তমানে বিশাল বিশাল ডাটা সেন্টারগুলোর মাথাব্যাথার কারন হয়ে দাড়িয়েছে তাদের অগনিত সংখ্যক হার্ডড্রাইভ যেগুলো খেয়ে নিচ্ছে কিলোওয়াট মেগাওয়াট পরিমান এনার্জী। তার থেকেও বড় চিন্তার বিষয় যেটা তা হল এদের থেকে নির্গত উত্তাপ। একেকটি ইনফরমেশন স্টোরহাউজ হয়ে দাড়িয়েছে একেকটি তাপ দুষনের জায়গা। এ থেকে নিঃসন্দেহে মুক্তি দেবে নতুন এই প্রযুক্তি।


মেমরিস্টর ভিত্তিক চিপের গতিকে সর্বাধিক ব্যবহার করতে এতে ব্যবহার করা হচ্ছে অপটিক্যাল ডাটা ট্রান্সফার সিস্টেম। মেমরিস্টর দিয়ে তৈরি চিপের ভেতরের উপাদান গুলোর নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করার জন্যে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ আলোকসংবেদী যোগাযোগ ব্যবস্থা যার ফলে চিপের ভেতরে আলোর গতিতে তথ্য আদান প্রদান চলতে থাকবে। বর্তমানে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হচ্ছে তা বিদ্যুতিক। এ কারনে গতি অনেক কম। তাই নতুন গতির ডিভাইসের সাথে নতুন গতির যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যবহার।

এটাই শেষ নয়।

এখানেই শেষ নয়। সবথেকে আশ্চর্যের বিষয়টা রেখে দেয়া হয়েছে সবার শেষে জানাবার জন্যে। এখন আমরা ব্যবহার করি প্রসেসর, যেটা র‌্যাম থেকে তথ্য নিয়ে প্রসেস করে। চিন্তা করুন তো একবার, এমন এক প্রসেসর এর কথা, যেটা একই সাথে মেমেরী ও প্রসেসর! নতুন শোনাচ্ছে? একদম না। আমাদের মস্তিস্ক কাজ করে এভাবেই। আমাদের মস্তিস্কের যে সিস্টেম, তা আসলে এক রকম মেমরিস্টর বেজড সিস্টেম। মেমরিস্টরের আবিস্কারক লিওন চুয়া, তার গবেষনা পত্রে বলে গেছেন এমন এক সম্ভাবনার কথা। মেমরিস্টর দিয়ে এমন এক ডিভাইস বানানো সম্ভব যা কিনা একই সাথে প্রসেসর ও মেমোরী হিসেবে কাজ করবে। মেমরিস্টর এর পক্ষে সাধারন লজিক অপারেশন এবং তার থেকেও জটিল কাজ করা সম্ভব। ব্যপারটা অনেকটা এমন, আগে প্রসেস করার জন্যে তথ্যকে প্রসেসর পর্যন্ত নিয়ে যেতে হত। এখন তথ্য র‌্যাম-প্রসেসর এর যে জায়গাটিতে থাকবে, সেই অংশটিই সাময়িক ভাবে প্রসেসর এ পরিনত হয়ে প্রসেসিং এর কাজ সম্পন্য করবে। অনেকটা যেন সুকুমার রায়ের সেই গল্পের মত। ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল!

এভাবে দরকারে সমস্ত মেমোরীটাকেই একটা প্রসেসর বদলে ফেলা যাবে আবার প্রসেসরটাই হয়ে যাবে মেমোরী।

একটু আগেই বলা হয়েছে মেমরিস্টর দিয়ে সাধারণ লজিক অপারেশন সম্পন্য করানো সম্ভব। এটাই মেমরিস্টর দিয়ে নতুন ধরনের প্রসেসর বানাবার সম্ভাবনা তৈরি করে দিয়েছে। তার সাথে আরও বলা হয়েছে এটি সাধারণ লজিক অপারেশনের থেকেও জটিল কাজ করতে সক্ষম। একটি ট্রানজিস্টর বেজড ডিজিটাল সিস্টেম কাজকরে শুধুমাত্র শুন্য ও এক ব্যবহার করে। সিস্টেম এর পাওয়ার নির্দিষ্ট ভোল্টের নিচে গেলে ধরা হয় শুন্য, তার উপরে ধরা হয় এক। ডিজিটাল লজিক কেবলমাত্র এই দুটি নিয়ে কাজ করে কারণ এই দুটির বাইরে অন্য কিছু ধরতে পারার ক্ষমতা তার নেই। কিন্তু মেমরিস্টর একটি এ্যনালগ উপাদান। এটি শুন্য ও এক নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি শুন্য-এক এর মাঝে থাকা অনেক গুলো স্বম্ভাবনা নিয়ে কাজ করতে পারে। ঠিক যেমনটি করে থাকে আমাদের মস্তিস্ক। তাই গবেষকরা বলছেন, তারা এখন এমন কম্পিউটার তৈরি করার কথা চিন্তা করতে পারেন যেটা তৈরি হবে মেমরিস্টর দিয়ে এবং এটি হবে নিজে থেকে শিখতে পারা বুদ্ধিমান যন্ত্র।

আমাদের বর্তমান কম্পিউটারগুলো অনেক চালাক-দ্রুত গতিসম্পন্য সন্দেহ নেই। কিন্তু কোন কিছু তাদের শিখিয়ে না দিলে নিজে থেকে শেখার ক্ষমতা তাদের নেই। এই বাধারই পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে মেমরিস্টর এর উদ্ভাবনে। আমাদের মস্তিস্কের হাজার বিলিয়ন নিউরন পরস্পরের সাথে কানেক্টেড থাকে একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে। একে বলা হয় সাইন্যাপস। এটি একরকম সুইচিং বেজড নেটওয়ার্ক সিস্টেম যেটা সেকেন্ড এর মাঝে হাজারো রকমের সুইচিং প্রসেস সম্পন্য করে থাকে। এই নেটওয়ার্ক সিস্টেম নির্ধারণ করে কোন ধরনের কাজের জন্য কোন কোন গ্রুপের নিউরন পরস্পরের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে একসাথে তথ্য বিনিময় করে একটি কাজের প্রকৃতি নির্ধারণ করবে অথবা কম্পিউটারের ভাষায় বলতে গেলে একটি লজিক্যাল প্রসেসসিং সাইকেল সম্পন্য করবে। এই কাজটি যে মস্তিস্ক যত ভালভাবে করতে পারে, সে তত বেশি বুদ্ধিমত্তা দেখাতে পারে। এই ভালভাবে করার ব্যপারটি আবার নির্ভর করে কার সুইচিং সিস্টেম কতটুকু দক্ষ অথবা সঠিকভাবে কাজ করার পদ্ধতিটুকু সেটি কতটুকু জানে। তবে এটা সত্যি, এই সিস্টেমটিকে কিছু জিনিস জানতে হয় কাজ শুরু করার জন্য।। যেটি সে জানতে পারে শেখার মধ্য দিয়ে, ভুল করে ধরা পড়লে তা শুধরে নেবার মধ্য দিয়ে। এর জন্য সে ব্যবহার করে পুর্ববর্তী বেসিক অভিজ্ঞতা যেগুলো সে হয়ত শিশু অবস্থায় শিখেছিল। ব্যাপারটি অনেকটা এরকম, অল্পকিছু জ্ঞান ও নতুন পরিবেশে মানিয়ে সেবার সহজাত দক্ষতাটুকু সহ পৃথিবীতে এসে সেটিকে পুজি করে সে ক্রমাগত আরও শিখতে থাকে। এভাবে এক সময় সে শিখে ফেলে কিভাবে নতুন জিনিস শিখতে হয়। এভাবেই একটি বুদ্ধিমান প্রানী আরও বেশি বুদ্ধিমান হতে থাকে। সাইন্যাপস এর এই বেসিক ক্ষমতাটুকু আছে মেমরিস্টর এর। মেমরিস্টর দিয়ে তৈরি জটিল ইলেকট্রনিক সার্কিট পরিবর্তিত অবস্থার সাথে মানিয়ে চলার জন্য নতুন জিনিস শেখার ক্ষমতা রাখে অথবা বলা যেতে পারে নতুন অবস্থার সাথে নিজেকে মানানসইভাবে পরিবর্তন করে নেবার ক্ষমতা রাখে। এটা খুব বেশি দুর ভবিষ্যতের কথা হবে না যেখানে আমরা পাব সত্যিকার অর্থে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্য স্বত্তা যাদের সচেতনতা বা কনসাশনেস হবে তাদের নিজেদের মত করে ডেভলপ হওয়া সচেতনতা। কোন প্রোগ্রামারের তৈরি করা এক ঝাক মাপা চিন্তা ভাবনা নয়।

কি কি আশা করতে পারি আমরা মেমরিস্টর থেকে? আসুন সময়ের একটি টেবল তৈরি করার চেষ্টা করা যাক।

1. এক থেকে পাচ বছরের মাঝে আমরা আশা করতে পারি আমাদের ক্যামেরা, মোবাইল, গান শোনার যন্ত্রের উপযোগী বিশাল ক্ষমতা সম্পন্য মেমরিস্টর মেমোরী চলে আসবে বাজারে।

2. পাচ থেকে দশ বছরের মাঝে আমরা আশা করতে পারি বাজারে বর্তমান সাধারণ র‌্যাম, ফ্ল্যাশ মেমোরী ও হার্ডড্রাইভের পাশাপাশি মেমরিস্টর এর বিশাল আকারের স্টোরেজ এসে যাবে।

3. দশ থেকে বিশ বছরের মাঝেই আমরা আশা করতে পারি এমন সুপার কম্পিউটারের কথা যেটা তৈরি হবে মেমরিস্টর নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। এটা নিজেকে নিয়ে চিন্তাও করতে পারবে। তবে প্রথমদিকের প্রসেসরগুলো সরাসরি মেমরিস্টর এর না হয়ে ট্রানজিস্টর-মেমরিস্টর এর হাইব্রিড হবার সম্ভাবনা বেশি।

4. বিশ থেকে চল্লিশ বছরের মাঝে আশা করা যেতে পারে সম্পুর্ন মেমরিস্টর বেজড কম্পিউটার সিস্টেম। এর চেহারা হবে বর্তমানের থেকে সম্পুর্ন ভিন্ন। একেবারে চিন্তার বাইরে ভিন্ন কিছুও চলে আনা অসম্ভব কিছু নয়।

5. পন্চাশ থেকে একশ বছরের মাঝে উন্নত কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্য কম্পিউটার আশা করা যেতে পারে যেগুলো মানুষের করা প্রোগামের সাহায্যে নিজে নিজে অনেকখানি স্বতন্ত্র চিন্তা করতে সক্ষম হবে।

6. একশ থেকে দুশ বছরের মাঝে আমরা হয়তবা দেখতে পাব আই রোবট এর সানির মত কোন রোবট যেটির নিজের সচেতনতা ও চিন্তা চেতনা থাকবে। নিজের ব্যক্তিত্ব নিয়ে সে সমাজে তার অবস্থান দাবি করবে। হয়তবা স্বপ্নও দেখবে।

7. দুশ থেকে তিনশ কিংবা চারশ বছরের মাঝে মেমরিস্টর বেজড সিস্টেম মানুষের মস্তিস্কের সাথে একীভুত ভাবে অবস্থান করবে। আস্তে আস্তে মানুষ এর সচেতনতা স্থানান্তর হতে শুরু করবে অসম্ভব জটিল ইলেকট্রনিক মস্তিস্কে। সত্যি হবে স্যার আর্থার সি. ক্লার্ক এর ব্রেইন ক্যাপ এর স্বপ্ন। যেহেতু টাইটেনিয়াম বেজড মেমরিস্টর সার্কিট এর ক্ষয় হয় না মিলিয়ন বছরেও, আশা করতে দোষ কি, মানুষ পাবে তার আকাঙ্খিত অমরত্ব?

8. হাজার বছর থেকে শুরু করে অজানা সময়, মানুষ ও মেমরিস্টর এর একীভুত স্বত্তা পাড়ি দেবে মহাবিশ্বের এপার থেকে ওপার। বয়স ও সময় যেহেতু কোন সমস্যা নয়, এটা খুবই সম্ভব।

অনেক স্বম্ভাবনা দেখলাম আমরা। অনেক কিছু হয়ত বাস্তব হবে, অনেক কিছুই হয়ত হবে না। তবে আশা করতে আর স্বপ্ন দেখতে কোন দোষ নেই। এর কতটুকু সত্যি হবে, তার বেশ কিছু অংশ আমরা দেখে যেতে পারব আমাদের জীবদ্দশাতেই। একটাই আশা, যা হোক ভাল যেন হয়। কোন মহা ক্ষমতাসম্পন্য দানব আমরা দেখতে চাই না। কোন যান্ত্রিক স্বত্তার সচেতনতার নিচে চাপা পড়ুক আমাদের ব্যক্তিত্ব, তাও কাম্য নয়। মানুষ আমরা, মানুষই যেন থাকি। শেষ পর্যন্ত।

0 comments:

Post a Comment