অদ্ভুত সব মজার আবিস্কার ও তাদের পেটেন্ট।

বাচ্চাদের ডায়াপারের জন্য কনডাক্টিভিটি সেন্সিং


নতুন আবিস্কার গবেষকের নামে রেজিস্ট্রি করে নেয়াকে বলে পেটেন্ট, নতুন যে কোনো আবিষ্কার বা উদ্ভাবনই পেটেন্ট করতে হয়। পেটেন্ট না করলে সেটি অন্য কারো আবিষ্কার হয়ে যেতে সময় লাগে না। সেক্ষেত্রে মূল উদ্ভাবনকারী না পান কৃতিত্ব, না পান টাকা পয়সা। আমাদের দেশে মেধাস্বত্ব নিয়ে অতটা কড়াকড়ি না থাকায় পেটেন্ট বা ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন করার ব্যাপারে খুব একটা উদ্যোগী হন না অনেকেই। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উনড়বত দেশগুলোতে পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের কথাই ধরি। সেদেশে নতুন আবিষ্কারের জন্য পেটেন্ট ইস্যু করার দায়িত্ব সে দেশের পেটেন্ট এন্ড ট্রেডমার্ক অফিস-এর। আমাদের দেশের পেটেন্ট অফিসে দিনে দূরে থাক, মাসে ক’টা নতুন পেটেন্ট ইস্যু করা হয় সন্দেহ আছে, কিন্তু মার্কিনীরা পারলে প্রতি মিনিটে একটা করে পেটেন্ট করে। আবিষ্কার আর উদ্ভাবনের এক মচ্ছবই যেন লেগে আছে সেখানে।
পরিসংখ্যান দিয়ে বললে বুঝবেন। ১৯৬৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সেদেশের পেটেন্ট এন্ড ট্রেডমার্ক অফিস থেকে প্রায় ২৫ লাখের মত পেটেন্ট দেয়া হয়েছে কেবল প্রযুক্তি সেক্টরেই। সেদেশে পেটেন্ট করা কোনো বস্তু বা প্রক্রিয়া পরবর্তী ২০ বছর পেটেন্টকারী ছাড়া আর কেউ তৈরি বা বিক্রি করতে পারবে না। এসব পেটেন্টের বেশির ভাগই নানা কাজে মানুষের উপকারে আসে, অর্জন করে জনপ্রিয়তা। তবে এমন অনেক পেটেন্টও আছে যেগুলো জনপ্রিয়তা অর্জন করা তো দূরে থাক, শুনলেই হাসিতে ফেটে পড়তে পারে সাধারণ মানুষ। তবুও বিচিত্র চিন্তার অধিকারী পেটেন্টকারীদের প্রচেষ্টা থেমে থাকেনি। একের পর এক কি অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে তারা এসে ভিড় জমিয়েছে পেটেন্ট অফিসের দরজায়। এ পোস্টে থাকল এমনই কিছু বিচিত্র আইডিয়ার কথা যেগুলো পেটেন্ট অফিস থেকে পেটেন্ট করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তারপর আর কেউ খোঁজও রাখেনি তার।
বেবি ডায়াপার: বাবা-মা কে জানান দেবে কখন বদলাতে হবে।

পেটেন্ট নম্বর: ৪২০৫৬৭২
পেটেন্ট আবেদনের তারিখ: ১৯৭৭-এর ২৮ নভেম্বর
পেটেন্ট ইস্যুর তারিখ: ১৯৮০-র ৩ জুন
উদ্ভাবকের নাম: কারেল ভোরাক
বাচ্চারা যাতে যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করে সব নষ্ট করে না ফেলে সেজন্য তাদেরকে ডায়াপার পরিয়ে রাখা হয়। কিন্তু বাচ্চা মলমূত্র ত্যাগ করে ডায়াপার ভিজিয়ে বা নষ্ট করে ফেললে বাবা বা মা-কে সাধারণত ঘ্রাণশক্তির ওপর নির্ভর করেই ব্যাপারটা আঁচ করতে হয়। এ কারণেই কারেন ভোরাক আবিষ্কার করেন এই অদ্ভুত প্রযুক্তি, যার সাহয্যে ডায়াপার ভিজে যাওয়া মাত্রই জানা যাবে। এই বিশেষ ডায়াপারে একটি প্লাস্টিকের বহিরাবরণ এবং বিশেষ মূত্র- শোষক উপাদানে তৈরি একটি অভ্যন্তরীণ আবরণও আছে। সঙ্গে আছে একটি সেন্সিং ডিভাইস যা ডায়াপারের মধ্যে আদ্রতার পরিবর্তন হলেই বুঝে ফেলবে এবং সে অনুযায়ী সিগনাল পাঠাতে থাকবে। বাবা মা তখন চট করেই বুঝে যাবেন, বাচ্চার ডায়াপার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়েছে।
স্বয়ংক্রিয় বিছানা গোছানো যন্ত্র

পেটেন্ট নম্বর: ৪৪৪১২২২
পেটেন্ট আবেদনের তারিখ: ১৯৮১-র ৩০ জুলাই
পেটেন্ট ইস্যুর তারিখ: ১৯৮৪-র ১০ এপ্রিল
উদ্ভাবকের নাম: পিটার জে. টাসকারেলা
আমাদের অনেকের কাছেই সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ হচ্ছে অগোছালো বিছানাকে গোছানো। এ কারণেই পিটার জে. টাসকারেলা চেষ্টারচরিত্র শুরু করেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিছানা গোছানোর কাজটি সারার। তাঁর তৈরি ‘ইলেকট্রনিক্যালি অপারেটেড বেড কাভার’ বিছানার সঙ্গে দুটো লৌহদন্ড দিয়ে আটকানো থাকে, সঙ্গে যান্ত্রিক বাহু এবং রোলার ব্যবহার করা হয় বিছানার চাদর পাতা থেকে শুরু করে বিছানাকে ভাঁজমুক্ত করার জন্য। সব কাজই হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এমন একটি মহান আবিষ্কারও পাবলিকের কাছে মোটেই পাত্তা পেল না। আসলেই আবিষ্কারকের জন্য দুঃখ হয়!
জেটচালিত সার্ফবোর্ড
জেটচালিত সার্ফবোর্ড
পেটেন্ট নম্বর: ডি২৮৯০৩১
পেটেন্ট আবেদনের তারিখ: ১৯৮৪-র ২৩ জুলাই
পেটেন্ট ইস্যুর তারিখ: ১৯৮৭-র ৩১ মে
উদ্ভাবকের নাম: ইগন মনোস্টোরি
জেট পাওয়ার ব্যবহার করে সমূদ্রে সার্ফিং করা? শুনতে অদ্ভুত মনে হলও এমন একটি আবিষ্কারের জন্য পেটেন্ট আসলেই মঞ্জুর করা হয়েছিল মার্কিন পেটেন্ট অফিস থেকে। এ মারাত্মক সার্ফবোর্ড- এর পরবর্তী পরিণতি সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য অবশ্য পাওয়া যায় না
কুকুর ঘড়ি
পেটেন্ট নম্বর: ৫০২৩৮৫০
পেটেন্ট আবেদনের তারিখ: ১৯৯০-এর ৯ জুলাই
পেটেন্ট ইস্যুর তারিখ: ১৯৯১-এর ১১ জুন
উদ্ভাবকের নাম: ইগরডনি এইচ. মেটস, ব্যারি ডি. থমাস
আমাদের মানুষের তুলনায় কুকুর বিড়ালের মত প্রাণীদের জীবনকাল তুলনামূলকভাবে কম। যেমন, একটা কুকুর যেখানে গড়ে মাত্র ১১ বছর বাঁচে মানুষ সেখানে বাঁচে ৭৭ বছরের মত। কাজেই অনুপাতটা হচ্ছে ৭ বনাম ১।
এ কারণে আমাদের সময়ের চাইতে কুকুরের সময় অবশ্যই আলাদা হবে, হবে অধিক দ্রুত। এ কারণেই এই দুই আবিষ্কারক একটি কুকুর ঘড়ি আবিষ্কার করেন যাতে ১২ ঘণ্টার স্ট্যান্ডার্ড ডিসপেই প্রদর্শিত হয়, তবে মানুষের জন্য তৈরি ঘড়ি যত দ্রুত ঘোরে এ ঘড়ি ঘোরে তার চাইতে ৭ গুণ বেশি দ্রুত। জ্বি, কুকুরের সুবিধার্থে। ঘড়িতে সময় অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার একটি দিনকে আখ্যায়িত করা হয় ‘ডগ ডে’ বা ‘কুকুর দিবস’ হিসেবে।
মজার মজার সব জিনিস আবিস্কার করে সেটাকে ফলাও করে প্রচার করতে আগ্রহের শেষ নেই আমেরিকানদের। তবে ইন্টারেস্টিং ব্যপারটা হল, এই সব পেটেন্ট এর সবগুলোই কিন্তু অকাজের বা হাসি আসবার জিনিস না। অনেক গুরুত্বপুর্ন বিষয় উঠে আসে বিভিন্ন সময়ে। আর এই সব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই আজ আমেরিকা প্রযুক্তিতে অসাধারণ পরিমান উন্নত।
অন্যদিকে আমাদের দেশের কথা চিন্তা করুন, কেউ একজন কোন জিনিস আবিস্কার করলে সেটা নিয়ে ঠাট্টা-মস্করার ধুম পড়ে যায়। আবার সেটা যদি গুরুত্বপুর্ন কিছুও হয়, তাহলেও সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার মত সাহায্যকারী মানুষ খুজে পাওয়া যায় না। একটা ভুল হল, সাহায্যকারীও চায় না তারা অনেকসময়। সম্ভাবনাময় একটি বিষয়ে বিনিয়োগ চান অনেক গবেষক। সেটাও কি পান তারা? গবেষকের কাজ তো গবেষনা করা। আবিস্কৃত বিজ্ঞানকে উন্নত করে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা। তাকে যখন হাতে হারিকেন ঝুলিয়ে সাপোর্টার/স্পন্সর খুজতে বেরোতে হয়, তখন আমাদের বুঝে নিতে হবে দেশের অবস্থা কি। এই রকম একটি দেশ যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির কথা বলে তখন আসলেই হাস্যকর লাগে শুনতে।
তবে আশার আলো এখনও জ্বলে। সেই আলোটি জ্বালিয়ে রাখে আমাদের দেশের তরুন সম্প্রদায় এবং এখনও মনে তারুন্য ধরে রেখেছে এরকম কিছু মানুষ। তারা চেষ্টা করে চলেছে অনবরত, সকল প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে, এক এক করে জয় করে নিচ্ছে অনেক কিছু।
তাদের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক।
0 comments:
Post a Comment