Search This Blog

প্রযুক্তির কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার একাল সেকাল

Tuesday, August 16, 2011

আসুন না, প্রযুক্তির দুনিয়াটাকে একটু কাছ থেকে দেখি… কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার একাল সেকাল


কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমাদের মনে কতই না জল্পনা কল্পনা। সেই প্রাচীন কাল থেকেই কৃত্তিম মানুষ নিয়ে নানারকবম গল্পকথা চলে আসছে। এই সব গল্পকথা এখনও শেষ হয়নি, একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সিনেমার আদলে এখনও আমাদের সামনে হাজির করা হচ্ছে নিয়মিতভাবে। এসব দেকে কেউ কেউ প্রশ্ন কওে বসেন, এটাতো গেল গল্পকাথা। বাস্তবের অবস্থা কি?


বাস্তব দুনিয়াতেও এর উপরে জোর গতিতে কাজ চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও বনেদী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিএম তাদের ‘ওয়াটসন’ সুপারকম্পিউটারকে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় কুইজ শো জিওপার্ডিতে অংশগ্রহণ করাবে। জিওপার্ডিতে জিততে হলে ওয়াটসনকে কেবল কুইজের সবগুলো প্রশ্ন বুঝলেই চলবে না, সঠিক উত্তরটি খুঁজে বের করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সে উত্তর দিতেও হবে। সেই ৫০-এর দশক থেকেই বোঝা গেছে যে রোবটিক্স ও কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তায় কম্পিউটিং  এর একটি বিশেষ অবস্থান থাকবে। উন্নত কম্পিউটিং এর ধারাবাহিক উন্নতি ফসল ওয়াটসন বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ঠিক কোন ভূমিকাটি পালন করে সেটি দেখার জন্য এখন অনেকেই উদগ্রীব হয়ে আছেন।

খ্যাতনামা চলচ্চিত্র পরিচালক স্ট্যানলি কুব্রিক ‘২০০১: এ স্পেস ওডিসি’ ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন আজ ৪১ বছর হয়ে গেছে। তবে এই ২০০৯ সালে এসেও আর্থার সি কার্কের সৃষ্টি সেই দুরন্ত শক্তিশালী কম্পিউটার HAL কিন্তু কল্প কাহিনীর পর্যায়েই থেকে গেছে। চার দশকের বেশি সময়েও HAL ধরনের কোনো কিছু বাস্তবের মুখ দেখেনি। সে থেকে আজ অবধি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভুবনে একের পর এক উন্নতি ঘটে চললেও আমরা এখনও এমন কোনো কম্পিউটারকে পাইনি যেটি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে বা ভাব বিনিময় করতে পারবে। এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে আইবিএম-এর ওয়াটসন প্রজেক্ট টিমের ড. ডেভিড ফেরুচ্চি বলেন, ‘আমার মনে হয় সাধারণ মানুষ যেমনটা ভাবে এটা তার চাইতেও অনেক কঠিন একটি কাজ।’

কাল্পনিক ঐঅখ প্রজেক্ট-এর সঙ্গে অবশ্য ওয়াটসন প্রজেক্টের মোটামুটি ভালই মিল আছে। এটি মানুষের প্রশ্ন শুনতে পারে, এবং তার ওপর ভিত্তি করে উত্তর দিতে পারে। অথচ ঐঅখ থেকে ওয়াটসনে পৌছাতে আমাদের ৪০ বছর লেগে গেল, তাও ঐঅখ কল্প কাহিনীতে যা যা করতে পারত ওয়াটসন তার অর্ধেকটাও করতে পারবে না। বোঝাই যাচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে যে যাই বলুক না কেন, উন্নতির গতিটা আসলেই বেশ ধীর।

অথচ হাজার হাজার বছর ধরেই মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার স্বপ্ন দেখে আসছে। গ্রিক উপকথায় আছে, গ্রিক দেবতা হিফাস্টাসের প্যারালাইসিস হওয়ার পর তিনি দুটো সোনালী রোবট বানিয়েছিলেন যেগুলো তাঁকে চলতে ফিরতে সাহায্য করত। আর মেরি শেলির বিখ্যাত ফ্রাঙ্কেনস্টাইন উপন্যাসের সেই মনুষ্যনির্মিত দানব তো গত দুশো বছর ধরে মানুষের হাজারো কল্পনার বিষয় হয়ে আছে। এরই মধ্যে বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে শুরু হল কম্পিউটার বিজ্ঞানের অভুতপূর্ব উন্নতি। আর এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়েও শুরু হল নতুন করে জল্পনা কল্পনার। গণিতবিদ অ্যালান টুরিং দাবা খেলার উপযোগী একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখতে শুরু করেছিলেন সেই ১৯৪৮ সালেই! ১৯৫০ সালে মাইন্ড জার্নালে ছাপানোর জন্য টুরিং লিখলেন ‘কমিপউটিং মেশিনারি এন্ড ইন্টেলিজেন্স’ নামে একটি নিবন্ধ। এতে তিনি সত্যিকারের বুদ্ধিমান বলে বিবেচিত হবার জন্য একটি যন্ত্রের কোনে কোন যোগ্যতা থাকতে হবে তার একটি মানদন্ড নির্ধারণ করেন। টুরিং-এর নির্ধারণ করা এই মানদন্ডের নাম ‘টুরিং টেস্ট’। 
টুরিং টেস্টের মূল কথাই হচ্ছে, একটি যন্ত্রকে তখনই বুদ্ধিমান বলা যাবে যদি এটি একজন মানুষকে সফলভাবে বোকা বানিয়ে তাকে দিয়ে বিশ্বাস করাতে পারে যে, যন্ত্রটি আসলে মানুষ অথবা মানুষের মত বুদ্ধিমান। সে থেকে আজ অব্দি এই ‘টুরিং টেস্ট’ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স জগতের বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার ভিত্তি হিসাবে কাজ করে আসছে। এর মধ্যে লেবনার পুরস্কারের কথা বলা যায়। এ প্রতিযোগিতায় বিচারকরা একটি কম্পিউটার এবং একজন মানুষ উভয়কেই বিভিন্ন প্রশ্ন করেন আরেকটি কম্পিউটারের মাধ্যমে এবং উত্তর শুনে বোঝার চেষ্টা করেন কোন উত্তরটা মানষের আর কোনটা কম্পিউটারের। এছাড়াও টুরিং-এর নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে টুরিং অ্যাওয়ার্ড। খ্যাতনামা বহু কম্পিউটার বিজ্ঞানী এ পুরস্কারকে কম্পিউটার সায়েন্স-এর নোবেল হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

সময়ের ধারাবাহিকতায় অ্যালান টুরিং-এর চাইতে বর্তমান সময়ে রোবোটিক্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর ভুবনে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, আর এ অগ্রগতির কারণেই সুপারকম্পিউটার ‘ডিপ বু’ দাবায় হারিয়ে দিতে পেরেছিল বিশ্বসেরা দাবাড়– গ্যারি কাসপারভকে। আর ওয়াটসন কর্তৃক ‘জিওপার্ডি’ গেমে অংশগ্রহণের কথাতো শুরুদেই বলা হল। এর বাইরে আর যেসব কম্পিউটার বিজ্ঞানী মহলে সাড়া ফেলতে পেরেছে তাদের মধ্যে অ্যাডামের কথা বলতে হয়। অ্যাবার্স্টউইথ ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক রস কিং ও তার সহকর্মীদের তৈরি এই রোবোটিক কম্পিউটার নিজে নিজেই বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করতে সম বলে দাবি করছেন কিং। কিং-এর বক্তব্য হচ্ছে, অ্যাডাম যুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞানকে উপস্থাপিত করতে পারে। এছাড়া এটি নিজে নিজে হাইপোথিসিসও দাঁড় করাতে পারে, যা অ্যাডামের আগে আর কোনো যন্ত্র করতে পারেনি। এ কাজে সে ‘অ্যাবডাকশন’ নামে একটি কৌশল প্রয়োগ করে। গোয়েন্দা শিরোমণি শার্লক হোমস কোনো সমস্যা সমাধানে যে কৌশলটি প্রয়োগ করতেন এটা অনেকটা তেমনই। হোমস কোনো হত্যারহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে চিন্তা করতেন এ হত্যা রহস্যের সবচেয়ে সন্তোষজনক সমাধান কী হতে পারে। এরপর তিনি এর সঙ্গে ঘটিত বিভিন্ন বস্তু বা ঘটনা নিরপেক্ষভাবে পর্যবেণ করতেন এবং তা থেকে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন। কিং- এর দাবি, অ্যাডাম নাকি ঠিক এভাবেই পর্যবেণের ভিত্তিতে বিভিন্ন হাইপোথিসিস দাঁড় করাতে পারে। শুধু তাই নয়, এরপর নাকি সে বিভিন্ন ল্যাবরেটরি টেস্ট-এর মাধ্যমে হাইপোথিসিসগুলো পরীা (এক্সপেরিমেন্ট) করতেও পারে। কেবল কিংই নন, অনেক বিজ্ঞানীই অ্যাডাম এবং সমজাতীয় যন্ত্রের সম্ভাবনা নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত।


কম্পিউটারকে দিয়ে মানুষের সঙ্গে কার্যকরভাবে মিথস্ক্রিয়া তথা ভাবের আদান প্রদান করাই বিজ্ঞানীদের এখন প্রধান চিন্তা এবং ল্য। এ ত্রেটিতে ইদানীং যথেষ্ট অগ্রগতিও হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে চ্যাটবট জেবারওয়াকি (িি.িলধননবৎধিপশু.পড়স)-র কথা বলা যায়। উপরোক্ত ওয়েব সাইটে গিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিশিষ্ট একটি কম্পিউটার-রোবটের সঙ্গে আলাপচারিতা করা যায়। এরকম একটা আলাপচারিতার উদাহরণ দেয়া যাক:

জেবারওয়েকি: তুমি কি স্টারওয়ারস পছন্দ কর?

ভিজিটর: হ্যাঁ, করি। তুমি কর?

জেবারওয়েকি: হ্যাঁ।

ভিজিটর: কেন?

জেবারওয়েকি: এটা একটা দারুন অভিযান, বিশেষ করে প্রাধান্য বিস্তার করা এবং অন্যকে বশীভূত করার এক চমৎকার উদাহরণ হিসেবে।

জেবারওয়েকির দেয়া এসব উত্তরের কোনোটিই আগে থেকে তৈরি করা নয়, বরং জেবারওয়েকি নিজে ‘ভেবে’ এসব উত্তর দেয় বলেই দাবি জেবারওয়েকির স্রষ্টা রলো কার্পেন্টারের। জেবারওয়েকি-র মতই আরেকটি প্রজেক্ট হচ্ছে কেভারবট। এটিও ইতোমধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ সৃষ্টি করতে সম হয়েছে।

সত্যিকার অর্থে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কতদুর যাবে কোথায় গিয়ে থামবে এর অগ্রগতি, তা বোঝার কোন উপায় নেই। কিন্তু আমরা আগামী কয়েক দশকের মাঝেই চমৎকার কিছু জিনিস দেখে মুগ্ধ হবার প্রস্তুতি নিতে পারি। সবটুকু না হোক ঐঅখ এরমত না হোক, আকর্ষনীয় কিছু যে আমরা দেখতে পাবো সামনে এটা নিশ্চিত।

0 comments:

Post a Comment