Search This Blog

ফাইলজিলা ফাইল ট্রান্সফারের এক অসাধারন টুল

Tuesday, August 16, 2011

ফাইল ট্রান্সফারের এক অসাধারন টুল: ফাইলজিলা 


ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তবে টেকনিক্যাল ব্যাপারে খুব বেশি জ্ঞান নেই এমন মানুষ ইন্টারনেট এক্সপার্টদের মুখে ‘প্রটোকল’ কথাট শুনলে একটু বিভ্রান্তিতে পড়েন। কারণ সাধারণভাবে প্রটোকল কথাটাকে তাঁরা যে অর্থে জানেন এখানেও সেই অর্থেই ব্যবহৃত হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেন না। অথচ প্রটোকলের প্রচলিত অর্থের সঙ্গে কম্পিউটারের ভুবনে এটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয় তার কিন্তু তেমন একটা ফারাক নেই।

তাহলে কেন এটা সবার বোধগম্য হচ্ছে না? যদি খুব সহজ করে বলতে হয়, কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং-এর ভুবনে (ইন্টারনেটও যার মধ্যে পড়ে), প্রটোকল হচ্ছে নিয়ম কানুনের একটি সেট যেটি কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে বার্তা বিনিময়ের ধরন এবং ফরম্যাট কি হবে সেটি ঠিক করে দেয়। বোঝার সুবিধার জন্য এটাকে নেটওয়ার্ক ভাষা হিসেবেও আমরা ধরে নিতে পারি। অনেক দিক দিয়েই বাস্তব ভাষা (যেমন ইংরেজি) এবং কম্পিউটার ভাষা (যেমন পিএইচপি)-র সঙ্গে যার সাদৃশ্য আছে।

আমরা যতবারই ওয়েব সাইট ভিজিট করি ততবারই কিন্তু একটি নির্দিষ্ট প্রটোকল অনুসরণ করি। আমরা জানি, ওয়েব সাইটের অ্যাড্রেস (যেটি ইউ আর এল নামে পরিচিতি) দেখতে এরকম: http://www.example.com এখানে http মানে হচ্ছে হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রটোকল, যেটি হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ভুবনে ওয়েব সার্ভারের কাছ থেকে কায়েন্টের কাছে কোনো রিসোর্সকে স্থানান্তর করার জন্য ব্যবহৃত একটি টিসিপি/আইপি ক্লায়েন্ট সার্ভার প্রটোকল।

একটা উদাহরণ দিলে ব্যপারটা বুঝতে সহজ হবে। ধরুন আমরা ওয়েব ব্রাউজ করছি। ওয়েব ব্রাউজারটি ওয়েব পেজে প্রদর্শনের জন্য কোনো ইমেজ ফাইলের একটি কপি রিসিভ করল। এই রিসিভ করার কাজে যে প্রটোকলটিকে ব্যবহার করা হল সেটি হচ্ছে এইচটিটিপি। এই এইচটিটিপি -রই আরেকটি রূপ বা ভার্শন হচ্ছে এইচটিটিপিএস। এর মানে হচ্ছে, আপনার ওয়েব ব্রাউজার এবং যে ওয়েব সাইটটি আপনি দেখছেন, তার মধ্যে একটি নিরাপদ সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। সাধারণত ক্রেডিট কার্ড ডাটা বা এ ধরনের স্পর্শকাতর তথ্য প্রদান করার সময় এ ঘটনাটি ঘটবে।

এসবের বাইরেও আরো অনেক ইন্টারনেট প্রটোকল আছে, যার মধ্যে খুবই গুরুত্বপুর্ন একটি প্রটোকল হচ্ছে ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকল বা এফটিপি। যারা ওয়েব সাইট তৈরি এবং পরিচালনা করেন তারাই সাধারণত এই প্রটোকলটি ব্যবহার করেন। এর মধ্যে থাকতে পারেন ওয়েব ডেভেলপার, ডিজাইনার, কনটেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইত্যাদি শ্রেণীর লোক।

এইচটিটিপি-র সঙ্গে এটির মূল পার্থক্য হচ্ছে, এইচটিটিপি-র ক্ষেত্রে আপনি, মানে ক্লায়েন্ট একটি ওয়েব সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ নিচ্ছেন। এ ওয়েব সার্ভার ওয়েব স্ক্রিপ্ট চালানো, পৃথক ফাইলকে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েব পেজে রূপ দেয়াসহ নানা কাজ করতে পারে। অন্যদিকে এফটিপির ক্ষেত্রে আপনি সংযোগ নিচ্ছেন একটি ফাইল সাভারের সঙ্গে, ফলে এখানে ব্যবহৃত প্রযুক্তির মূল ফোকাস হবে কার্যকরভাবে ফাইল আপলোড এবং ডাউনলোড করা। এ কাজটি এফটিপি ব্যবহার করে অনেক বেশি দ্রুত এবং সঠিকভাবে করা যায়।

প্রথম সাক্ষাতে এফটিপিকে জটিল এবং দুর্বোধ্য বলে মনে হতে পারে। তবে এটা নেহাতই সাময়িক। বিশেষ করে এফটিপি-র মৌলিক কনসেপ্ট-এর সঙ্গে পরিচয় না থাকলে এটি ঘটতে পারে।

এখানে আমরা এমন একটি এফটিপি প্রোগ্রামের সঙ্গে পরিচিত হব যেটির জনপ্রিয়তা এবং কর্মমতা প্রশ্নাতীত। এটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর নিজের কম্পিউটার এবং দূরবর্তী ফাইল সার্ভারের মধ্যে নিশ্চিন্তে ফাইল ট্রান্সফার করা যাবে।

ফাইলজিলা: এফটিপি-র সেরা হাতিয়ার

ফাইলজিলা (FileZilla), আগেই বলেছি, একটি এফটিপি অ্যাপ্লিকেশন বা এফটিপি কায়েন্ট। এটির মত এরকম আরো বহু এফটিপি প্রোগ্রাম বাজারে থাকলেও ফাইলজিলা যে সেরাদের মধ্যে একটি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি ফ্রি এবং একটি ওপেন সোর্স সফটঅয়্যার। এর মানে হচ্ছে, আপনি এটির সোর্স কোডটিও ডাউনলোড করে নিতে পারেন। যথেষ্ট কারিগরি দক্ষতা থাকলে নিজেও ঘেঁটে দেখতে পারেন কিভাবে এ সফটঅয়্যারটি কাজ করে অথবা প্রয়োজনে নিয়ম মেনে নিজের মত করে পরিবর্তনও করে নিতে পারবেন।

অধিকাংশ ভালো ওপেন সোর্স অ্যাপ্লিকেশনের মত ফাইলজিলাও সমস্ত প্রধান অপারেটিং সিস্টেমই (উইন্ডোজ, ম্যাকওএসএক্স, লিনাক্স এবং বিএসডি) সাপোর্ট করে। এটি FTP, FTPS (SSL/TLS), SSH ফাইল ট্রান্সফার প্রটোকল অথবা SFTP এবং IPv6 সাপোর্ট করে। চার ডজনেরও বেশি ভাষার ইন্টারফেস সুবিধা পাওয়া যায় এতে।

এই সফটঅয়্যারটির বড় শক্তি এর সহজবোধ্য গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস, যাতে আছে বুকমার্ক, ফাইলনেম ফিল্টারিং, ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ সামর্থ্যসহ একটি ফাইল ট্রান্সফার কিউ যাতে এ মুহূর্তে ডাউনলোড হচ্ছে এমন সব ফাইলের তালিকা প্রদর্শিত হয়। ফাইলজিলার আরো আছে একটি কার্যকর সাইট ম্যানেজার। ইউজার যেসব সাইটের সঙ্গে কানেক্টেড তার সবগুলো সম্বন্ধে অ্যাকসেস ইনফরমেশন পাওয়া যায় এই সাইট ম্যানেজারে। চার গিগাবাইটের চাইতে বড় ফাইলও ফাইলজিলার সাহায্যে ট্রান্সফার করা সম্ভব, কোনো কারনে ট্রান্সফার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হলে পরবর্তীতে যেখানে বাধাগ্রস্থ হয়েছে সেখান থেকেই আবার ডাউনলোড অথবা আপলোড শুরু করা যায়, নতুন করে প্রথম থেকে শুরু করতে হয় না।
যেসব পাঠক আরো বেশি টেকনিক্যাল ডিটেইল জানতে চান তাদের উদ্দেশে বলি, ফাইলজিলা ASCII, binary এবং PASV মোড সমর্থন করে। আপনি রিমোট সার্ভারে অনেক ধরনের কাজ সম্পন্য করতে পারবেন, যার মধ্যে ডিরেক্টরি তৈরি এবং ফাইল পারমিশন সেট আপের মত ব্যপারগুলোও রয়েছে। রিমোট সার্ভারের সিস্টেম টাইম যদি আপনার লোকাল কম্পিউটারের সিস্টেম টাইম থেকে ভিন্ন হয় তাহলে আপনি এমনভাবে টাইম সেট করতে পারবেন যাতে পরবর্তীবার আপনি যখন ঐ সার্ভারে কানেকশন নেবেন তখন এটির ফাইলগুলোর টাইমস্ট্যাম্প আপনার নিজের টাইম জোনের সঙ্গে মিলিয়ে প্রদর্শন করা হবে।

এছাড়া টাইমজিলা নন-বুট পার্টিশন থেকেও রান করা সম্ভব। আপনার মাল্টিপল বুট পার্টিশন থাকলে এবং প্রতিটি পার্টিশনে এটিকে ইনস্টল করা এড়াতে চাইলে এ ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন।

হাতেকলমে ফাইলজিলা

ফাইলজিলার সুবিধা ও সামর্থ্য যাচাই করার সবচেয়ে বড় উপায় হল এটিকে আপনার কম্পিউটারে ইনস্টল করে হাতেকলমে পরীক্ষা করে নেয়া। ফাইলজিলার হোমপেজ থেকে ‘ডাউনলোড ফাইলজিলা ক্লায়েন্ট’ বাটনে ক্লিক করে এটি করতে পারেন।

তবে ডাউনলোড করার সময় সার্ভার ভারসনটা ভুলে ডাউনলোড করে ফেলছেন কিনা সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কায়েন্ট ডাউনলোড পেজে আপনার অপারেটিং সিস্টেমের সঙ্গে মিলে এমন লিংকটি কিক করুন। উইন্ডোজ ববহারকারীরা এক্সিকিউটেবর ইনস্টলার অথবা আর্কাইভ ফাইল দুটো থেকে যে কোনোটি বেছে নিতে পারেন। জিপ ফাইল থেকে আপিকেশন ইনস্টল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না এমন ইউজারদের উচিত হবে প্রথম অপশনটি বেছে নেয়া।

ইনস্টলেশন প্রক্রিয়াটি বেশ সোজাসাপ্টা। প্রতিটি ডায়ালগ ইউজারকে ব্যাখ্যা করে দেয় তার সামনে কি কি অপশন রয়েছে। এ কারণে এখানে বিস্তারিত ইনস্ট্রাকশন এবং স্ক্রিনশট দেখানো হল না। তবে দু একটা জিনিস মাথায় রাখা জরুরী।

আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে আপনি কেবল ইংরেজি ইন্টারফেসটিই ব্যবহার করবেন তাহলে চুজ কমপোনেন্ট ডায়ালগে ল্যাঙ্গুয়েজ চেকবক্সটি ডিসিলেক্ট করে হার্ড ড্রাইভের স্থান সাশ্রয় করতে পারেন। ফাইলজিলা এবং উইন্ডোজ এক্সপোরারের মধ্যে ফাইলকে ড্র্যাগিং করতে না চাইলে একই স্ক্রিনে শেল এক্সটেনশনটাও ডিসিলেক্ট করে দিন।

প্রথমবারের মত যখন ফাইলজিলা রান করবেন তখন এটি একটি ওয়েলকাম ডায়ালগ প্রদর্শন করবে। ওয়েবের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন তথ্য এবং ডকুমেন্টেশনের সঙ্গে লিংক আছে এই ওয়েলকাম ডায়ালগের। প্রধান উইন্ডোর ছয়টি প্যানেল আছে। একেবারে উপরের প্যানেলে দেখতে পাবেন রিমোট সার্ভারের কাছ থেকে কোনো মেসেজ থাকলে (যেমন লগইন রেজাল্ট) সেগুলো। ফাইল ট্রান্সফার কিউ প্রদর্শিত হবে নিচের প্যানেলে। এর মাঝামাঝি, স্ক্রিনের প্রধান অংশটি লম্বালম্বিভাবে দুটো অংশে বিভক্ত। বামদিকের অংশ বরাদ্দ আছে আপনার লোকাল কম্পিউটারের জন্য, আর ডানদিকের অংশ বরাদ্দ আছে রিমোর্ট সার্ভারের জন্য। দুটো অংশেরই উপরের দিকে আছে একটি ডিরেক্টরি ট্রি এবং নিচের দিকে আছে একটি ফাইল লিস্ট (সিলেক্ট করা ডিরেক্টরির জন্য)। ফাইল/সাইট ম্যানেজার মেন্যু আইটেমটি বেছে নিন অথবা স্রেফ কন্ট্রোল + এস চেপে সাইট মানেজার ডায়ালগটি ওপেন করুন।

সাইট ম্যানেজার ডায়ালগের বাম দিকের অংশে একটি সেকশন আছে যেখানে আপনি যে যে সার্ভারে লগ ইন করতে চাইতে পারেন অথবা সাধারণভাবে জনপ্রিয় সাইট সেগুলোর তালিকা আছে, একই সঙ্গে আছে অতীতে আপনি যেসব সার্ভারে লগইন করেছেন সেগুলোর তালিকাও আপনি পাবেন মাই সাইট এর অধীনে।

এগুলোর যে কোনোটির বিস্তারিত বর্ণনা চাইলে সার্ভারের নামের ওপর কিক করুন, এরপর ডানদিকের ডায়ালগে দেয়া চারটি ট্যাব ব্যবহার করে সাইটের সেটিং পরিবর্তন করতে পারবেন।

বেশির ভাগ ডিফল্ট সেটিংই পরিবর্তন করার দরকার নেই, কেবল হোস্ট নেম (অথবা আইপি অ্যাড্রেস), ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড (লগইন টাইপ পরিবর্তন করে এনিমস থেকে নরমাল করে দিন), ডিফল্ট লোকাল ডিরেক্টরি (সাধারণত আপনার কম্পিউটারের যে জায়গায় আপনি ঐ সাইটের ফাইলগুলো সেভ করছেন) এবং ডিফল্ট রিমোট ডিরেক্টরি (সাধারণত …/public_html”) এবং সার্ভার টাইমজোন অফসেট ছাড়া।

এছাড়াও ফাইলজিলার কুইককানেক্ট

কুইক কানেক্ট বার ব্যবহার করেও আপনি সার্ভারের সঙ্গে সংযোগ নিতে পারেন। এটি মেন্যু এবং টুলবারের ঠিক নিচেই অবস্থিত। মাত্র একবার সংযোগ নিলেই চলবে, ভবিষ্যতে আর প্রয়োজন নেই এরকমের কানেকশনের জন্য আপনি কুইককানেক্ট ব্যবহার করতে পারেন।

লোকাল এবং রিমোট ফাইল সার্ভারে বেশি সংখ্যক ফাইল ম্যানেজ করার একটি সমস্যা হচ্ছে, একটি ডিরেক্টরিতে ডজনখানেক বা তার বেশি ফাইল হয়ে গেলে আপনাকে অনেক বেশি স্ক্রলিং করতে হবে। এতে প্রচুর সময় লাগে এবং কাজটি বিরক্তিকরও বটে। এ সমস্যাকে এড়ানোর জন্য ফাইলজিলায় অপ্রয়োজনীয় ফাইল প্রদর্শন করাকে ফিল্টার আউট করার ব্যবস্থা আছে।

ফাইলনেম ফিল্টারস ডায়ালগে প্রবেশ করতে চাইলে যেতে হবে ভিউ ফাইল নেম ফিল্টার্স-এ। প্রোগ্রাম সেটিংস ডায়ালগের এডিট / সেটিংস সাহায্যে সাইট কানেকশনের েেত্র যে ডিফল্ট সেটিং দেয়া আছে সেটিকে পরিবর্তন করতে পারবেন। ফাইল ট্রান্সফারের সংখ্যা এবং গতিকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে আটকে দিতে পারবেন, পাবেন ফাইলজিলার ইন্টারফেসকে কাস্টমাইজ করতে, এক্সটার্নাল এডিটর ঠিক করে দিতে, ফাইল টাইপ অ্যাসোসিয়েশন সেট করতে এবং লগিং ও ডিবাগিং এনাবল করতে।

অনেক বড় হয়ে গেল লেখাটি। কিন্তু সফটঅয়্যারটির ফিচারও তো কম ছিল না। আরও ডিটেল তথ্য জানতে চাইলে ভিজিট করুন : http://wiki.filezilla-project.org/Documentation

0 comments:

Post a Comment